115
খাগড়াছড়ি প্রতিদিন ডেস্ক
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আছে, সঙ্গে আছে পূবালী বাতাস। কিন্তু দেখা নেই ইলিশের। গভীর সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই জেলেরা আশায় বুক বেঁধে নদীতে জাল ফেলেছে ।
কিন্তু ইলিশের ভরা মৌসুমেও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না রূপালী ইলিশ। তার উপর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। এ জন্য মাছ শিকার বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে তীরে ফিরছে জেলেরা । জ্যৈষ্ঠ থেকে ভরা মৌসুম চলছে ইলিশের।
কিন্তু জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণেও আশানুরূপ দেখা মিলছে না। তাই জেলেদের চোখে মুখে এখন দুশ্চিন্তা আর হতাশার ছাপ।
স্থানীয়রা জানান,উপক‚লীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর রুপালি সুস্বাদু ইলিশ মাছের খ্যাতি অনেক পুরনো। কিন্তু এ বছর আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ শুরু হলেও নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা নেই।
প্রতিদিন মেঘনা তেঁতুলিয়ার বুকে হাজার হাজার জেলে জাল ফেলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ছাড়াই ফিরতে হচ্ছে তীরে। গুটি কয়েক যে মাছ ধরা পড়ছে তা দিয়ে ট্রলারে ইঞ্জিনের জ্বালানি তেলের দামসহ অন্যান্য খরচও ঠিকমতো ওঠে না।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, চলতি মাসের মধ্যে ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে আসবে এবং কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলবে।
এদিকে দিনের বাজারে ভোজনরসিকদের চোখ ইলিশের ডালির দিকে। অন্য বছর এই সময়ে নদীর ঝাঁকা রূপালি ইলিশে ভরা থাকলেও এ বার ঠিক উল্টো। ইলিশের মৌসুমেও ইলিশ ধরতে না পারায় দুন্দিনে পড়েছেন জেলেরা। ভোজন রসিক বাঙালির মনটাও খারাপ।
একই সঙ্গে হতাশ মাছের আড়তের মালিকরাও। সারা দিনে দুই এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আসলেও তেমন হইচই নেই চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া, সামরাজ,নতুন সুইজ,খেজুর গাছিয়া ,বস্কসি,ঢালচর.চরপাতিলা মাছ ঘাটগুলিতে।
সেই সঙ্গে হাটবাজারগুলোতেও ইলিশের সেই হাঁকডাক নেই । ফলে উপজেলার ৪৪ হাজার ৩ শত ১১ জন নিবন্ধিত জেলেসহ প্রায় ৬০ হাজার জেলে হতাশায় রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্যজীবীদের মাছ শিকারের ঠিকানা বলতে মেঘনা- তেঁতুলিয়া নদীর ২শ’ কিলোমিটারসহ উপজেলার মজিবনগর, চরমোন্তাজের জেলেদের ঠিকানা বুড়াগৌরাঙ্গ, তেতুলিয়া নদী। সারা বছরই কিছু-না-কিছু মাছ মেলে এই নদী থেকে।
কিন্তু বর্ষাকালে ইলিশের দৌলতেই পুঁজির জোগানটা হয়। সামরাজের মৎস্য ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন ও মাহমুদ হাসান
বলেন, টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। জেলেরা সাগরে গেছে। কিন্তু ভরা মৌসুমেও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এবার পাচ্ছে না।
চরমাদ্রাজ গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বছরের অন্য সময় মাছ ধরে কোনো ক্রমে সংসারটা চলে যায়। তখন কিছু টাকা ধার করতে হয়। আর ইলিশের মৌসুমে আয়ের সময়। এ বছর সেখানেই ঘাটতি পড়েছে। কী করে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছি না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো মারুফ হেসেন মিনার বলেন, মূলত চলতি বছরে খুব বিলম্বে বৃষ্টি হয়েছে যার ফলে ইলিশ মাছের তেমন দেখা মেলে না। বৃষ্টির পানি হইলেই মাছটা জাগে এখান বৃষ্টি হচ্ছে এখন দেখা মিলবে। বৃষ্টি যত বেশি হইবে মাছের তত দেখা মিলবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ মাছের মৌসুম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই এই ভরা মৌসুমেও ইলিশ ধরা পড়ছে না। তার মতে, বিষয়টি চিন্তার হলেও এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জেলেদের জালে যে একদমই মাছ ধরা
পড়ছে না তা কিন্তু নয়। ইলিশ ধরা পড়ছে তবে পরিমাণে কম। একই সঙ্গে ছোট সাইজের।
খাগড়াছড়ি প্রতিদিন/ডিএইচ