নিজস্ব প্রতিবেদক:
রেডলেডি পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে পাহাড়ি উপজেলা রাঙামাটির লংগদুর চাষীদের। পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এখানকার চাষিরা। পেঁপে বিক্রি করে পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। উপজেলার বগাচতর, গুলশাখালী, মাইনীমূখসহ সব ইউনিয়নে রেডলেডি জাতের পেঁেপ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার কৃষকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউটিউব দেখে উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নে এই রেডলেডি জাতের পেঁপের আবাদের সূচনা হয় গত চার পাঁচ বছর আগে। ধীরে ধীরে সাফল্য আসতে শুরু করলে অনেক চাষী এখন পেঁপের আবাদে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে বগাচত্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাষীরা বেশি আবাদ করছেন রেডলেডি পেঁপের। এই ইউনিয়নের অনেক যুবকের পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে বলে জানালেন চাষি নাছির উদ্দিন।
পেঁপে চাষি নাছির উদ্দিন বলেন, আমি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে রোজগার করতাম, যা আয় করতাম সবই খরচ হয়ে যেত। এলাকার অনেক যুবক পেঁপে চাষ করে ভালো আয় করছে দেখে আমিও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বাড়ির আঙ্গিনায় পেঁপে চাষ শুরু করি। ইউটিউব দেখে এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে ১০ মাস আগে চারশ পেঁপে চারা লাগাই। দুই মাস হলো ফলন পেতে শুরু করেছি। এপর্যন্ত পাঁচ টনের মতো পেঁপে বিক্রি করেছি। এভাবে আরো তিন বছর ফলন পাবো। আশা করছি এই পেঁপে বাগান থেকে আমার দশ লাখ টাকা আয় হবে।
চাষি আব্দুর রহমান বলেন, এক একর জমিতে পেঁপে চাষ করতে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কোনও গাছে ২০ কেজি আবার কোনও গাছে এক মণ পেঁপে ধরেছে। আশা করছি, খরচ বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে। পেঁপে চাষে কষ্ট কম। ভালো ফলন হওয়ায় লাভ বেশি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেকের পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে।’
আব্দুর রহমানের তথ্যমতে উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নেই ছোট বড় মিলিয়ে অর্ধশত কৃষক পেঁপের আবাদ করেছে। বিশেষ করে ইউনিয়নের ঠেকাপাড়া এলাকার খলিল মিয়ার ১২শ, নুর হোসেনের এক হাজার, রাঙ্গিপাড়ার লুৎফরের ১২শ, শিবেরেগা এলাকার নুরুজ্জামান এর দেড় হাজার পেঁেপ গাছের বড় বাগান রয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লংগদুতে এবার ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। যা থেকে আনুমানিক ৫০০ টন পেঁপে উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় অনেক বড় চাষি আছেন যাদের দেড় দুই হাজার পেঁপে গাছ আছে। বড় চাষিরা পাইকারদের কাছে বাগানসহ বিক্রি করে দেন। এত খরচ কম হয় এবং লাভ বেশি হয়।
বগাচত্বর ইউনিয়নের একটি কৃষি ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, পাহাড়ের মাটি পেঁপে চাষের জন্য খুবই উপযোগী এখানে পানি জমে থাকার সুযোগ নাই। বগাচত্বরের বিভিন্ন এলাকায় পেঁপের ভালো আবাদ হচ্ছে। আমরা নিয়মিত চাষিদের খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং বাগান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।
লংগদু কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, ‘এবার শুধুমাত্র বগাচত্বর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কমবেশি পেঁপের আবাদ হয়। উপজেলার অনেক বেকার যুবক পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পেঁপে চাষ অনেক লাভজনক। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ কেজি করে পেঁপের ফলন হয়। আমরা নিয়মিত পেঁপে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লংগদুতে এবার ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। এ থেকে ৫০০ টন ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এবার পেঁপের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বছর এখানে পেঁপের চাষাবাদ বাড়ছে। এখানকার মাটিও পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে দুই জাতের পেঁপের চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রেড লেডি অপরটি গ্রিন লেডি। গ্রিন লেডি জাতের পেঁপে শুধুমাত্র সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য। রেড লেডি পেঁপে সবজির পাশাপাশি পাকিয়ে খাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেঁপে ও অন্যান্য চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। চাষিদের বাগান তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে একাধিক কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন।’
খাগড়াছড়ি প্রতিদিন/দিআরা