পূর্ববর্তী সংবাদ
৪৪ টাকার স্যাভলন ৭০টাকা!
প্রকাশকাল : ০৬ জুন ২০২০
মন্তব্য : ০
বাস্তব ঘটনাঃ
সেদিন নিজ বাসায় ব্যবহারের জন্য খুব জরুরিভাবে জীবানুনাশক স্প্রে তৈরির প্রয়োজন হওয়ায় পুরো খাগড়াছড়ির প্রতিটা ফার্মেসি, অধিকাংশ মুদি দোকানসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করলাম, ১ পিচ সেভলন বা ডেটল পাওয়া যায় কিনা? কোথাও পেলাম না। ২দিন পর আবার খোঁজ করলাম, তাও কোথাও পেলাম না। সবারই একই কথা, এগুলো মার্কেটে সাপ্লাই নাই, পাওয়া যায় না। কিন্তু কেন সাপ্লাই নাই, এর পেছনে রহস্য কি, কেউই বলতে পারে না!!
অবশেষে খুব ভাল পরিচিত একজন ফার্মেসি দোকানদারের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম, সেও প্রথমে অবলীলায় বলে দিল, এগুলো এখন মার্কেটে সাপ্লাই নাই, পাওয়া যায় না। একটু পর কি মনে করে আশপাশটা এক নজর দেখে নিয়ে বলল, আমার নিজের জন্য এনে রেখেছিলাম, ১ পিচ আপনাকে দেই। কাগজ দিয়ে ভাল করে মুড়িয়ে কেউ না দেখে মতো আমার হাতে ধরিয়ে দিল, মনে হলো যেন এটা অবৈধ কোন মাল। আমিও কথা না বাড়িয়ে আশপাশের কেউ বুঝে উঠার অাগে হাতে নিয়ে যথাস্থানে সেইভ করে নিলাম। দামের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, আপনার থেকে তো বেশি নেওয়া যাবে না। আমার নিজের জন্য আনা, কেনা যা অাছে তাই দেন, সত্তর টাকা। বিনাবাক্য ব্যয়ে দামটা পরিশোধ করে দ্রুত বিদায় নিলাম। মনের মধ্যে খচখচটুকু থেকেই গেল, গায়ের রেইট জানি কতো? বাসায় এনেই দেখে নিলাম, ১১২ এমএল সেভলন, গায়ের মূল্য ৪৪ টাকা। অথচ দোকানির ভাষ্যমতে, তার কোন লাভ ছাড়াই তার কেনামূল্য ৭০/- টাকাতেই আমাকে দিয়ে দিল, আমিও নিয়ে আসলাম।
আমি এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না, আমার খুব ভাল পরিচিত দোকানদার তিনি কোন লাভ ছাড়াই ৭০/- টাকাই রাখলেন। তিনি এ বৈশ্বিক বিপর্যয় চলাকালীন অমাকে তার নিজের জন্য আনা সংরক্ষিত মাল হতে কেনামূল্যে ১ পিচ মাল দিয়ে কতো বড় মহৎ, উদার মানবিকতার পরিচয় দিলেন! নাকি তার আড়ালে ৪৪/- টাকার মাল ৭০/- টাকায় আমার কাছে বিক্রি করে ভোক্তা অধিকার আইনে আমার সাথে অনেক বড় প্রতারণা করলেন! আমাকে ১টা বাঁশ দিয়ে দিলেন? আমার এই না বুঝার কারণে- আমি এখনো পর্যন্ত বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। কারণ, সে যদি নিজের জন্য ৭০/- টাকা দিয়ে কিনে আনা মাল হতেই আমার জরুরি প্রয়োজনে ১টা বিনা লাভে দিয়ে থাকেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আমার অনেক বড় উপকার করেছেন, এতে কোন সন্দেহ নাই। বরং আমি তার কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ। আর যদি নিজের ব্যবহারের জন্য এনে রাখছি, মার্কেটে নাই, সাপ্লাই নাই, এসব বলে, কৃত্রিম সংকট তৈরির কাজ করে থাকেন এবং এসবের আড়ালে জাতির এ চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে ৪৪/- টাকার মাল ৭০/- টাকায় বিক্রি করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত চরম অন্যায় কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বলে রাখা ভাল, আমি নিজে প্রশাসনে চাকরি করা সত্বেও বাস্তবতার কারণে তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা নেয়া সম্ভব হলো না। বরং মনে মনে এখনো তার কাছে কৃতজ্ঞ যে, সে ঐদিন এ ১ পিচ সেভলন না দিলে আমি কারো কাছেই পেতাম না, আর আমি এবং আমার পরিবার এখনো সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হতাম।
বিঃদ্রঃ আমাদের দেশের ব্যবসায়ীগণ এতো বেশি নীতি, নৈতিকতা সমৃদ্ধ যে, যখন যে জিনিসের চাহিদা বেশি, প্রয়োজন বেশি, সবসময়ই সে জিনিস মার্কেট থেকে উধাও হয়ে যায়, সাপ্লাই থাকে না। ইচ্ছাকৃত হোক, অনিচ্ছাকৃত হোক মার্কেটে একটা কৃত্রিম সংকট সৃস্টি করে রাখা হয়। পাইকাররা মাল ছাড়ে না, আর খুচরা দোকানিরাও অতি কৌশলে খুবই স্বল্প পরিমাণে কিছু মাল আনবে এবং অনেক বেশি দামে কেনা এই বলে বলে দ্বিগুণ, তিনগুণ, কোন কোনক্ষেত্রে চারগুণ, পাঁচগুণ পর্যন্ত দাম রাখে। আর ক্রেতা সাধারণও প্রয়োজনের কাছে এমন অসহায় থাকে, এ অতিরিক্ত দামেই মাল না কিনে উপায় থাকে না। আর খাগড়াছড়ি বা মফস্বল শহরগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও তেমন কিছু করার থাকে না, কারণ প্রোডাক্টগুলো তো আর এখানে উৎপাদন হয় না। আর খুচরা দোকানিরাও মাল না পেলে তারা অানবে কোত্থেকে?

বিঃ দ্রঃ ‘খাগড়াছড়ি প্রতিদিন’ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইলো। কর্তৃপক্ষ যে কোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখে।