পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর নারীর প্রতি নিপীড়ন বন্ধ হবে কবে?
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর লাগামহীন চাঁদাবাজি, খুনাখুনি ও অপহরণের ঘটনা দেশবাসী জানলেও তাদের কর্তৃক সংগঠিত নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে না। তাদের লালসা কিংবা সন্দেহের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে পাহাড়ের নারীরা। পরিবার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় তাঁরা এর প্রতিবাদ করছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসবের খণ্ডচিত্র প্রকাশ পেলেও তার কোন প্রতিকার পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কিংবা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বের করা আনতে কষ্টসাধ্য হলেও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য চোখ বন্ধ করে যে হারে সাম্প্রদায়িকতাকে টেনে আনা হয় তার একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত নিজের বয়ফ্রেন্ডের হাতে খুন হওয়া কলেজ ছাত্রী “ইতি চাকমা” এর ঘটনা। তুষার চাকমার নামে কথিত প্রেমিকের হাতে খুন হয়ে ইতি চাকমা জন্ম দিয়েছিল নানা প্রশ্ন? নানা অপবাধের। তবে পুলিশের প্রযুক্তি নির্ভরতা তা উন্মোচন করেছে কিছু মানুষের চোখ বন্ধ করে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতির। পাহাড়ে ধর্ষণ মানে কিছু মানুষের কাছে চোখ বন্ধ করে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ব্যবসার পুঁজি। সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা ঘটনা না জেনে চাপিয়ে দেয়া হয় অপবাধ, চলে চোখ বন্ধ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার।
এবার কথা বলা যাক সাম্প্রাতিক একটি ঘটনা নিয়ে। আঞ্চলিক সংগঠনের এজেন্ট সন্দেহ থেকে গত ৭ জুন রাতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার লম্বাছড়া গ্রাম থেকে এক নারীকে তুলে নিয়ে যায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসীত গ্রুপের লোকজন। লম্বাছড়া এলাকার আশপাশের কোন আস্তানায় নিয়ে ওই নারীর ওপর চালানো হয় পাশবিক ও মানসিক নির্যাতন। জিজ্ঞাসাবাদের নামে রাতভর নির্যাতন করে সকালে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ নারী অভিযোগ করতে পারেনি থানায় গিয়ে। এলাকার সবাই বিষয়টি জানলেও প্রতিবাদ কিংবা বিচার চাইতে সাহস করছে না সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। তাহলে প্রশ্ন নারী নির্যাতনের বিচার চাইতে কি সাম্প্রদায়িকতা থাকতে হবে। চুপচাপ কেন তথাকথিত সুশীল সমাজ। প্লেকার্ড, রগরগা ফেসবুক স্ট্যাটাস, ব্লগিং কিংবা দেয়ালিকা কেন লিখছেন না। কেন থেমে আছে আপনাদের মানবতা। লম্বাছড়া তথা আশপাশের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় কার্বারী হেডম্যান থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের সবাই জানে ৭ জুন রাতের বর্বরতার কথা তবে কেউ ভয়ে মুখ খুলছেন না। আর কত নারীর ইজ্জত পুঁজি করে চলবে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর রাজনীতি। কবে মানুষ হয়ে প্রতিবাদের স্লোগান বের হবে পাহাড়ের মানুষের কণ্ঠে?
শুধুমাত্র দীঘিনালার লম্বাছড়ায় নয়, সাম্প্রদায়িকতার দোহায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নীরবে চলছে নারীর প্রতি নির্যাতন ও নীপিড়ন। ভালবেসে দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্রকে বিয়ে করার অপরাধে রাজধানী ঢাকার কলাবাগান বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহৃত হয়ে নিজ জাতির কাছে নিলামে উঠতে হয়েছিল একসময়কার হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী রেটিনা চাকমাকে। আধিপত্য বিস্তারের জেরে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকায় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী কৃর্ত্তিকা ত্রিপুরাকে ধর্ষণ ও নৃশংস ভাবে হত্যা। পাহাড়ে বৈষম্যের ছায়া সরে যাক, মানবিকতা আসুক প্রতিটি মানুষের মাঝে। সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে নয়, মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াক মানুষের জন্য।